সরস সমাচার

বল বয়

Posted On: August 13, 2021

খেলার মাঠে বা মাঠের বাইরে অহরহ ঘটে চলেছে নানান মজার ঘটনা। তারই কয়েকটি রইল এখানে:

।। ১ ।।

ক্রিকেটে ভারতের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাসকার। ১৯৭১-এ তাঁর অভিষেক হয়েছিল ওয়েস্ট ইণ্ডিজে। চারটি টেস্টে মোট ৭৭৪ রান করেছিলেন। এই দারুণ সাফল্যে ভাগ্যও কিছুটা সহায় ছিল তাঁর। জীবনের প্রথম দু’টি রান এসেছিল প্যাডে লেগে। আম্পায়ারের সৌজন্যে ওই দুই রান যোগ হয়েছিল ওঁর ব্যাক্তিগত স্কোরে। এ ছাড়া ওঁর একাধিক ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের আরেক কিংবদন্তি স্যার গারফিল্ড সোবার্স। জীবনের প্রথম (সেই সিরিজের দ্বিতীয়) টেস্টে হোল্ডারের অফ স্ট্যাম্পে একটা শর্ট বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ তোলেন সুনীল। দ্বিতীয় স্লিপে সোবার্সের হাতে লেগে মাটিতে পড়ে বলটি। এর পরের টেস্টে শিলিংফোর্ডের একটি শর্ট বলে স্কোয়ার কাট করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ তোলেন তিনি। এবারও সেখানে সেই সোবার্স এবং আরেকবার তিনি জীবন দান করলেন সানিকে। ওই ইনিংসেই সুনীলের রান যখন ৯৪, তখন নরিজার একটা বল ফরোয়ার্ড খেলতে গেলেন। সোবার্স তখন দাঁড়িয়েছিলেন শর্ট স্কোয়ার লেগে। সোবার্স ব্যাপারটা আঁচ করে বাঁদিকে সরে এসে ব্যাটের ওপর থেকে তুলে নিতে গেলেন বলটাকে। কিন্তু বলটা প্রত্যাশার চেয়ে একটু বেশিই লাফিয়ে সুনীলের গ্লাভসে লেগে চলে গেল ঠিক সেই জায়গায়, কয়েক মুহূর্ত আগে সোবার্স যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন। অর্থাৎ সুনীলের আরেকটি জীবন প্রাপ্তি। হতাশ সোবার্স সুনীলকে বলেছিলেন, “মাঠে কি আর লোক নেই? সব ক্যাচ যে আমার দিকেই তুলছ!”

।। ২ ।।

এই ঘটনাটাও গত শতকের সাতের দশকের। বিশ্ব একাদশের হয়ে খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন বেসিল লুইস ডি অলিভিয়েরা ও হিলটন মাইকেল অ্যাকারম্যান। বিমানবন্দরে ওদের স্বাগত জানাতে আয়োজকদের তরফে এসেছেন টনি গ্রেগ। দুই খেলোয়াড়ই গ্রেগের পূর্ব পরিচিত। গ্রেগের সঙ্গে এসেছেন আরেকজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক। তাঁর সঙ্গে আলাপের আগেই অলিভিয়েরা আর গ্রেগ একটি জরুরি কাজের জন্য অ্যাকারম্যানকে একটু অপেক্ষা করতে বলে বেরিয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে অ্যাকারম্যান গ্রেগের সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ শুরু করলেন, “আচ্ছা আপনি কি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত?”

ভদ্রলোক বললেন, “হ্যাঁ।”

অ্যাকারম্যান এবার বললেন, “আপনি কখনও ক্রিকেট খেলেছেন?”

মুচকি হেসে ভদ্রলোক মাথা নাড়লেন, “হ্যাঁ।”

“স্কুল, কলেজ টিমে ছিলেন?”

“হ্যাঁ।”

“স্টেট লেভেলে খেলেছেন?”

“হ্যাঁ, তা অল্প-সল্প খেলেছি।”

“অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কখনও খেলেছেন?”

“হ্যাঁ, খেলেছি।”

এবার অ্যাকারম্যান সামান্য থমকে গেলেন। সম্ভ্রমের সুরে বললেন, “ওহ, আপনি ন্যাশনাল টিমের হয়েও খেলেছেন? তা আপনার নামটা তো জানা হলনা।”

সেই প্রৌঢ় ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন, “ডন ব্র্যাডম্যান।”

।। ৩ ।।

ব্র্যাডম্যানের আরেকটি ঘটনা বলি। ১৯৯৮–৯৯ এর অ্যাসেজ সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে ইংল্যাণ্ড ক্রিকেট দল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে পর্যদূস্ত হয়ে ৩–১ এ সিরিজ খুইয়েছে তারা। মাঠে তাদের খেলোয়াড়দের পারফরমেন্স শোচনীয়। ওদের নিয়ে দর্শকদের মধ্যে রীতিমত হাসাহাসি চলছে। সিরিজের শেষ দিকে স্যার ডনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে এই ইংল্যাণ্ড দলের বিরুদ্ধে খেলতে পারলে তাঁর রানের গড় কত হত?

বিন্দুমাত্র না ভেবে ডন উত্তর দিয়েছিলেন, “এই ধর মোটামুটি ৬০ হত নিশ্চয়ই।”

প্রশ্নকর্তা অবাক হয়ে বলেছিলেন, “কি বলছেন কি? আপনার ব্যাটিং অ্যাভারেজ ৯৯.৯৪, সেখানে এই যাচ্ছেতাই দলের বিরুদ্ধে মাত্র ৬০?”

ডন গম্ভীর স্বরে উত্তর দিয়েছিলেন, “আরে আমার বয়েসটা যে এখন ৯০।”

।। ৪ ।।

এবার একটু যাওয়া যাক ফুটবল মাঠে। সময়টা গত শতকের সাতের দশক। খেলার মাঠে তখন ইস্টবেঙ্গলের দাপটে মোহনবাগান কোনঠাসা। যাদবপুর অঞ্চলে চিরকালই ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেই সময় মাঠের দাপটের সৌজন্যে ওই অঞ্চলের মোহনবাগানীরাও আড়াল খোঁজে। হঠাৎ একদিন এক রসিক মোহনবাগান সমর্থকের লেখা একটি পোস্টার নজরে এল:

বন্যেরা বনে সুন্দর
শিশু মাতৃক্রোড়ে
মোহনবাগান ভারতে সুন্দর
ইস্টবেঙ্গল যাদবপুরে

পোস্টারটা কতক্ষণ অক্ষত ছিল সেটা অবশ্য জানা যায়নি। 

Tagged with: